প্রকাশিত: Sun, Jan 28, 2024 12:05 PM
আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 11:48 PM

[১] জ্ঞানবাপী মসজিদের জায়গাতেও হিন্দু মন্দির ছিল, রায় ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের

ইকবাল খান: [২] ভারতের বারাণসী বা কাশীতে জ্ঞানবাপী মসজিদের বর্তমান কাঠামো তৈরির আগে ওই জায়গায় একটি হিন্দু মন্দির ছিল বলে এক সমীক্ষার পর জানিয়েছে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বা আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই)।

[৩] বিবিসি জানায়, গত বছর জুলাই মাসে বারাণসী জেলা আদালত এএসআইকে ওই মসজিদ চত্বরে সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এএসআই-এর সেই রিপোর্ট, যা এখন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে চার মাসের জরিপ, বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ এবং স্থাপত্যের অবশেষ, বৈশিষ্ট্য, নিদর্শন, শিলালিপি, শিল্প ও ভাস্কর্যের অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে এটা সহজেই বলা যায় বর্তমান কাঠামো নির্মাণের আগে সেখানে একটা হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল।

[৪] এ বিষয়ে মুসলিম পক্ষ জানিয়েছে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে এএসআই রিপোর্টের একটি প্রতিলিপি তারা পেয়েছে। এখন আইনজীবীদের কাছে রয়েছে সেই রিপোর্ট।

[৫] জ্ঞানবাপী মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদের যুগ্ম সম্পাদক এস এম ইয়াসিন বলেন, “এটা একটা রিপোর্ট, কোনও সিদ্ধান্ত নয়। প্রতিবেদনটা ৮৩৯ পৃষ্ঠার। এর সমীক্ষা ও বিশ্লেষণ করতে সময় লাগবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। বিবেচনার জন্য আদালতে তোলা হবে।”

[৬] মসজিদ কর্তৃপক্ষ মনে করে, সম্রাট আকবরের আমলেরও প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকে জ্ঞানবাপী মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন মুসলিমরা।

[৭] মামলার প্রধান বাদী রাখী সিংয়ের আইনজীবী অনুপম দ্বিবেদীর কাছ থেকে ৮০০ পৃষ্ঠারও বেশি প্রতিবেদনের একটি প্রতিলিপি পেয়েছে বিবিসি-ও।

[৮]এএসআই-র রিপোর্ট অনুসারে, ‘একটি কক্ষের ভিতরে পাওয়া আরবি-ফার্সি ভাষায় লেখা শিলালিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে মসজিদটি আওরঙ্গজেবের রাজত্বের ২০ তম বছরে (১৬৭৬-৭৭) নির্মাণ করা হয়েছিল।’

[৯]  ‘এ থেকে বোঝা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীতে আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে আগের যে কাঠামো ছিল তা ভেঙে ফেলা হয় এবং এর কিছু অংশ বদলে ফেলে বর্তমানে যে কাঠামো রয়েছে, সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে।’

[১০] প্রসঙ্গত, এএসআইয়ের এই সমীক্ষায় জ্ঞানবাপী মসজিদের সিল করা ওজুখানার বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করা হয়নি। হিন্দু পক্ষের দাবি, ওই ওজুখানায় একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে, যাকে মসজিদের কর্তৃপক্ষ ‘ফোয়ারা’ বলে থাকে।

[১১] রাখী সিংয়ের (বাদী পক্ষ) উকিল অনুপম দ্বিবেদী এই সমীক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘এএসআই বলেছে যে আওরঙ্গজেবের মসজিদ নির্মাণের আগে মসজিদ চত্বরে একটি হিন্দু কাঠামো এবং মন্দির ছিল।’

[১২]  মুসলিম (মসজিদ) পক্ষ মনে করে, আইন এএসআইকে হিন্দু পক্ষের দাবির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন প্রমাণ সংগ্রহ করার অনুমতি দেয় না।

[১৩] মসজিদ পক্ষের দাবি, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন লঙ্ঘন করেছে এএসআইয়ের এই সমীক্ষা। এই আইন ভারতের স্বাধীনতার সময় (১৯৪৭) বিদ্যমান ধর্মীয় স্থানগুলির ধর্মীয় চরিত্র পরিবর্তনের অনুমতি দেয় না।

[১৪] মসজিদ পক্ষ আরও বলেছে যে এলাহাবাদ হাইকোর্ট ইতিমধ্যে জ্ঞানবাপীর জমির মালিকানা সম্পর্কিত মামলায় এএসআই জরিপ নিষিদ্ধ করেছে। তাহলে অন্য কোনও ক্ষেত্রে সমীক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে কী করে?

[১৫] যদিও মন্দির পক্ষর (হিন্দু পক্ষ) বক্তব্য ছিল যে এএসআই সমীক্ষা আদালতে চলতে থাকা এই মামলার সহায়তা করবে।

[১৭] এ প্রসঙ্গে মসজিদ পক্ষের আইনজীবী এসএফএ নকভি বলেন, “১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট বাবরি মসজিদের মালিকানার মামলা বিচারাধীন ছিল।"